উৎসব হোক কিংবা পার্টি, অফিস হোক কিংবা নিত্যদিনের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সব জায়গাতেই সবাই নিজেকে সব সময় পরিপাটি রাখতে চায়। তাই ভারী হোক বা হালকা, একটু আধটু মেকআপ করতে তো সব নারীরা ভালোবাসেই। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে তিন মাস বাদে বাকি সারা বছর জুড়েই গরম থাকে সেখানে সারাদিন মেকআপ কি আর ঠিক রাখা যায়? মেকআপ করার এক দুই ঘন্টার মধ্যেই যেন গলে পড়তে শুরু করে। তাই মেকআপটা যাতে সারাদিন ঠিক থাকে তার জন্য চাই মেকআপ সেটিং স্প্রে।
মেকআপ শেষ করে একবার মেকআপ সেটিং স্প্রে লাগিয়ে নিলেই সারাদিনের মেকআপ ঠিক রাখার দুশ্চিন্তা আর করতে হয় না। কিন্তু বাজারে আজকাল অনেক ধরণের মেকআপ সেটিং স্প্রে পাওয়া যায়। কোন ধরণের মেকআপের সাথে বা কোন ধরণের ত্বকে কোন মেকআপ সেটিং স্প্রে ভালো হবে তা না জেনেই অনেকে যেকোন একটা কিনে ফেলেন। ফলে অনেকসময় ব্যয় করে যে মেকআপটা করলেন তা পুরোটাই মাটি হয়ে যায়। আজ আমি আপনাদের কিছু প্রচলিত মেকআপ সেটিং স্প্রে সম্পর্কে ধারণা দেব যাতে পরবর্তীতে মেকআপ সেটিং স্প্রে কিনতে গিয়ে কোন অসুবিধা না হয়।
ফেস মিস্ট
ফেস মিস্ট মূলত ওয়াটার বেসড হয়ে থাকে যা আমাদের ত্বককে অনেক বেশী মসৃণ করে তোলে এবং ত্বকে একটা উজ্জ্বল আভা এনে দেয়। এটি লাগানোর পর ত্বকের সাথে খুব ভালোভাবে মিশে যায় এবং ত্বকে যেন এক আর্দ্রতার পরত দিয়ে যায়। ফলে যারা শুষ্ক ত্বকের অধিকারী তাদের জন্য এটি অনেক বেশী উপযোগী। অনেকসময় ফেস মিস্টে বিভিন্ন ধরণের এসেনসিয়াল অয়েল যেমন, জোজোবা, টি ট্রি, ল্যাভেন্ডার ইত্যাদি মিশ্রিত থাকে যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী । এটি মূলত মেকআপ শুরু করা আগে ত্বকে ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, যারা অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের অধিকারী তারা মেকআপ করলে ত্বকে একটা পাউডারি ভাব চলে আসে । তারা ইচ্ছে করলে এটি মেকআপের উপরে ব্যবহার করতে পারেন । এতে মেকআপটা খুব ভালোভাবে বসে যাবে । তবে ফেস মিস্টে এমন কোন উপাদান থাকে না যা মেকআপকে সারাদিন ভালো রাখবে । হালকা মেকআপের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা কাজ করলেও ভারী মেকআপের ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ করবে না ।
কিছু ভালো ফেস মিস্ট-এর নাম
MAC Prep+Prime Fix + Setting Spray
The Bodyshop Vitamin E Hydrating Face Mist
e.l.f. Studio Makeup Mist & Set
সেটিং স্প্রে
এটিও মূলত ওয়াটার বেসড হয়ে থাকে । তবে এতে বিভিন্ন বোটানিকাল অয়েলও মিশ্রিত থাকে । ফেস মিস্টের থেকে এর পার্থক্য হলো এটি অবশ্যই মেকআপ শেষ করার পরে ব্যবহার করতে হয় তার আগে নয় । সেটিং স্প্রে মেকআপের সবগুলো উপাদানকে খুব সুন্দরভাবে মিশে যেতে সাহায্য করে । এটি ফাউন্ডেশন , কনসিলার , সেটিং পাউডার , ব্লাস সবকিছুকেই ভালোভাবে মিশিয়ে দেয় যাতে পরবর্তীতে মেকআপ গলে না যায় । অনেক সময় পাউডার বেজড মেকআপ ব্যবহার করলে ত্বকের উপর সহজে বসতে চায় না । ফলে মেকআপ ত্বকে ভেসে থাকে । এদিক থেকে সেটিং স্প্রে আপনার বেশ কাজে লাগবে । তবে এতে খুব বেশী উপাদান নেই যা মেকআপকে সারাদিন ভাল রাখবে । হালকা থেকে মিডিয়াম কাভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করতে পারেন । তবে তা ৩-৪ ঘন্টার বেশী কাজ নাও করতে পারে।
কিছু ভালো সেটিং স্প্রে-এর নাম
MAC Fix+
NYX Matte Finish Setting Spray
Wet n Wild Photo Focus Setting Spray
ফিক্সিং স্প্রে
ফিক্সিং স্প্রে অ্যালকোহল বেজড হয়ে থাকে । এটি মেকআপকে সারাদিন ঠিক একই রকম ভালো রাখতে সাহায্য করে । ঠিক অনেকটা হেয়ার স্প্রে এর মতো । এটি মেকআপের একদম উপরের লেয়ারটাকে লক করে দেয় ফলে ধুলো ময়লা বা ঘাম মেকআপ নষ্ট করতে পারে না । যেকোন পার্টি মেকআপ বা ব্রাইডাল মেকআপের মতো ভারী মেকআপকে সারাদিন ঠিক রাখে ফিক্সিং স্প্রে । আগের দুইটির থেকে এটি অনেক বেশী সময় মেকআপ ভালো রাখতে সাহায্য করে । তবে এটি মেকআপকে ত্বকে মিশে যেতে সাহায্য করে না । এতে অ্যালকোহলের মাত্রা বেশী থাকায় ত্বককে অনেকটা শুষ্ক করে দিতে পারে । তাছাড়া অনেকসময় অ্যালকোহলের মাত্রা বেশী থাকলে ত্বকের ক্ষতিও হতে পারে । তাই শুধুমাত্র বিশেষ দিনে ভারী মেকআপের ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহার করা ভালো ।
কিছু ভালো ফিক্সিং স্প্রে-এর নাম
Urban Decay All Nighter
Makeup Revolution Pro Fix Oil ControlMakeup Setting Spray
Maybelline Newyork Facestudio Master Fix Setting Spray
আশা করি এখন থেকে আর নিজের উপযোগী মেকআপ সেটিং স্প্রে খুঁজে পেতে অসুবিধা হবে না । তবে যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, ত্বক থেকে অন্তত ১০ সেন্টি মিটার দূর থেকে স্প্রে করবেন এবং অবশ্যই চোখ ও মুখ বন্ধ রাখবেন যাতে ভেতরে চলে না যায়।