আমার বান্ধবী তাসফিয়ার আজ সন্ধ্যাবেলা একটা বিয়ের দাওয়াত আছে। ওর বেস্টফ্রেন্ড সাফার বিয়ে। তাসফিয়া ভাবলো, মেকআপ-টা নিজেই করে নেই। মেকআপ-তো তাসফিয়া ভালোই করে। তো সমস্ত সাজগোজ শেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে চলে গেল। হঠাৎ সেলফি তুলতে গিয়ে ওর নজরে আসলো যে, ওর নাকের আশেপাশের মেকআপ কেমন জানি সরে সরে গিয়েছে। ব্যাপারটা কেমন বাজে না!!! এটাকেই বলে ফাউন্ডেশন সেপারেটিং। যারা মেকআপ পছন্দ করেন, তাদের মধ্যে অনেকের সাথেই হয়তো মিলে যাচ্ছে, তাই না? ফাউন্ডেশন এপ্লিকেশন (foundation application) এর পরে যদি কিছু কিছু জায়গা যেমন নাক, মুখ, চোখের আশেপাশে ইত্যাদি জায়গায় ফাউন্ডেশন (foundation) সরে সরে আসে, সেটাকেই ফাউন্ডেশন সেপারেটিং (foundation separating) বলে।
তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে কিছু টিপস জেনে নেই, যার মাধ্যমে আপনি ফাউন্ডেশন সেপারেটিং হওয়া রোধ করতে পারবেন!
ফাউন্ডেশন সেপারেটিং ও তার সমাধান
(১) ফাউন্ডেশন সেপারেটিং-এর সব থেকে বড় একটি কারণ হচ্ছে, একগাদা মেকআপ ব্যবহার করা। অনেকেই ভাবেন, একগাদা মেকআপ ব্যবহার করলেই সেটা লং লাস্টিং (long lasting) হবে। এছাড়া, অনেকে ইচ্ছা করেই প্রচুর মেকআপ প্রোডাক্ট (make up product) ইউজ করে থাকেন, যেটা মোটেই ঠিক নয়। একগাদা মেকআপ ব্যবহারের ফলে ফেইস-এ একটা কেকি (cakey) ভাব তৈরি হয়। যার ফলে, ফেইস-এর কিছু কিছু স্থান যেমন নাক, চোখের এরিয়া এবং মুখের এরিয়া-তে ফাউন্ডেশন সেপারেটিং হয়। চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব কম মেকআপ প্রোডাক্ট ইউজ করতে। এতে আপনাকে দেখতেও ভালো লাগবে আর ফাউন্ডেশন সেপারেটিংও কম হবে।
(২) ফাউন্ডেশন সেপারেটিং রোধ করতে সবসময় চেষ্টা করবেন লাইট ওয়েট মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে। এতে মেকআপ কেকি হবে না এবং গলে যাওয়ার সম্ভবনাও কম থাকবে। ফলে, আপনার মেকআপও ভালো থাকবে।
(৩) অনেকেই মেকআপ শুরুর আগে একটা প্রাইমার (primer) লাগাতে ভুলে যান। সব সময় একটি ভালো মানের প্রাইমার ব্যবহার করতে চেষ্টা করবেন। এতে করে মেকআপ সারাদিন ভালো থাকবে। ফাউন্ডেশন সেপারেটিংও কম হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, প্রাইমার-টি যেন খুবই লাইট ওয়েট হয়, যাতে আমাদের স্কিন হাইড্রেট থাকে।
(৪) যাদের অয়েলি স্কিন (oily skin) তাদের ফাউন্ডেশন সেপারেটিং-টা খুব বেশি পরিমাণে হয়। তাই আপনাদের স্কিন কেয়ার-এ কিন্তু একটু মনোযোগ দিতে হবে এবং মেকআপ অ্যাপ্লাই করার পূর্বে স্কিন-টাকে সুন্দরভাবে প্রিপেয়ার (prepare) করে নিতে হবে। এজন্য ক্লিনজিং (cleansing), টোনিং (toning) এবং ময়শ্চারাইজিং (moisturizing) কিন্তু মাস্ট! এছাড়াও সাথে ব্লটিং শীটস (bloating sheets) রাখবেন। শুরুতে প্রাইমার লাগানোর পরে একটি ব্লটিং শীট নিয়ে ফেইস-এ চেপে নিবেন। এতে ফেইস-এর বাড়তি অয়েল-টা ব্লটিং শীট শুষে নিবে।
(৫) ফাউন্ডেশন সেপারেটিং রোধে আপনার চাই একটি ভাল মানের আই প্রাইমার (eye primer)। কারণ, আই প্রাইমারগুলো বেশ লং লাস্টিং হয় আর এগুলো স্কিন অয়েলি হওয়া রোধ করে। তাই মেকআপ-এর শুরুতে প্রাইমার লাগানোর পরে যেকোনো ভালো মানের একটি প্রাইমার অল্প একটু একটি ছোট ব্রাশ-এ নিয়ে আপনার নাকের উপরে ও থুতনিতে হালকা করে লাগিয়ে নিন এবং ব্লেন্ড (blend) করে নিন। এতে করে কিন্তু ওই এরিয়া-গুলো অয়েলি হয়ে গলে যাবে না এবং ফাউন্ডেশন সেপারেটিংও রোধ করবে।
(৬) মেকআপ-এর শুরুতে ময়েশ্চারাইজার এবং প্রাইমার লাগানোর পরে একটি ভালো মানের লুজ পাউডার (loose powder) নিয়ে আপনার পুরো ফেইস-এ লাগিয়ে নিন। শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে যে, প্রাইমার-এর পরে আবার পাউডার কেন!!!!
তবে এটা কিন্তু একটি দারুণ মেকআপ হ্যাক। এরপরে আপনার ফাউন্ডেশন এবং বাকি মেকআপ অ্যাপ্লাই করে নিন। এই হ্যাক-টির কারণে আপনার মেকআপ সারাদিন ভালো থাকবে এবং ফাউন্ডেশন সেপারেটিং হবে না।
(৭) চোখের আশেপাশের এরিয়ায় ফাউন্ডেশন সেপারেটিং রোধ করতে বেকিং হতে পারে আপনার আদর্শ বন্ধু।
কেক বা পিজ্জা বেকিং-এর কথা বলছি না।!! বলছি মেকআপ বেকিং-এর কথা।
একটি মেকআপ স্পঞ্জ-এ বেশ খানিকটা লুজ পাউডার নিয়ে আপনার চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন। ৫ মিনিট পরে একটি বড় ফ্লাফি(fluffy) ব্রাশের সাহায্যে এক্সট্রা পাউডার-গুলো ঝেড়ে ফেলে দিন এতে করে আপনার চোখের নিচের মেকআপ সারাদিন ভালো থাকবে।
(৮) সবশেষে যেটা বলব, একটা ভাল সেটিং স্প্রে দিয়ে পুরো মেকআপ সেট করে নিবেন। এতে করে আপনার পুরো মেকআপ-টা লক হয়ে যাবে, মেকআপ লং লাস্টিং হবে এবং ফাউন্ডেশন সেপারেটিং হওয়া রোধ করবে। তাই একটি ভাল মানের সেটিং স্প্রে ব্যবহার করা মাস্ট!
এইতো জেনে নিলেন, ফাউন্ডেশন সেপারেটিং কী এবং কেমন করে ফাউন্ডেশন সেপারেটিং রোধ করবেন! আশা করছি, আপনাদের জন্য টিপস-গুলো অনেক হেল্পফুল হবে।