৩৫. ওয়াল্ট হুইটম্যান
[১৮১৯-১৮৯২]
আজন্ম দারিদ্র্য পীড়িত কবি হুইটম্যানের জন্ম ১৮১৯ সালের ৩১ মে লং আইল্যান্ডের ওয়েষ্ট হিলে। বাবা ছিলেন ছুতোর। ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
লিভস অব গ্রাসের কবি ওয়েল্ট হুল্টম্যান ছিলেন আমেরিকার নব যুগের নতুন চিন্তার প্রবক্তা।উনবিংশ শতকের আমেরিকা সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ। শুধু আমেরিকার নন,আধুনিক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।বাবা ওয়ালটার হুইটম্যান ছিলেন ইংরেজ। সামান্য লেখাপড়া জানতেন। অবসর পেলেই চার্চে গিয়ে ধর্ম –উপদেশ শুনতেন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চলল তাঁর সাধনা। শিল্পীর হাতে যেমন একটু একটু করে জন্ম নেয় তাঁর মানস প্রতিমা, হুইটম্যান তেমনি রচনা করে চলেন একের পর এক কবিতা।
১৮৫৫ সাল,হুইটম্যান শেষ করলেন তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন ; নাম দিলেন লিভস অব গ্রাস (Leaves of grass)। হাতে সামান্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন।সেই অর্থে এক বন্ধুর ছাপাখানায় ছাপা হল Leaves of grass। এই প্রথম বইতে নিজের নাম লিখলেন ওয়াল্ট হুইটম্যান। প্রথমে ছাপা হল ১০০০ কপি। কবিতা পড়ে কোন প্রকাশকই বই প্রকাশ করবার দায়িত্ব দিল না।
হুইটম্যান তা৭র কবিতার বই আমেরিকার প্রায় সব খ্যাতনামা লোকদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কেউ মতামত দেওয়া তো দূরের কথা, বই প্রাপ্তির সংবাদটুকু অবধি জানলেন না।
শুধু মাত্র এমার্সন মুগ্ধ হলেন। তাঁর মনে হল আমেরিকার সাহিত্য জগতে এক নতুন ধ্রুবতারার আর্বিভাব হল।
কয়েক মাস পর যখন দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করলেন, বইয়ের সাথে এই চিঠি ছেপে দিলেন। এমার্সনের এই প্রশংসা বহু জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। কিন্তু বইয়ের বিক্রি তেমন বাড়লে না।এত অপবাদ বিরুদ্ধ সমালোচনা সত্ত্বেও Leaves of grass কালজয়ী। এতে ফুটে উঠেছে তাঁর মানব প্রেম।তাঁর এই মনোভাবের মধ্যে ফুটে উঠেছে আমেরিকা গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছায়া । যদিও এই গণতন্ত্র কোন রাজনৈতিক বা সামাজিকতা গণতন্ত্র নয়। এক ধর্মীয় বিশ্বাস-মানুষ এক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছে যার পরিণতিতে এক পূর্ণতা-এই পূর্ণতা কি কবি নিজেও তা জানেন না তিনি বিশ্বাস করতেন এই পূর্ণতা ব্যর্থ হবার নয়।
“It cannot fail the young man who died and was buried,
Nor the young woman who died and was put by his side,
Nor the little child that pecped in at door and then drew back and was never seen again.Nor the old man who has lived without purpose and feels it with bitteness worse than gall.”
১৮৫৭ সালে তিনি “ব্রুকলিন ডেইলি টাইমস” পত্রিকার সম্পাদক হলেন।
কয়েক বছর পত্রিকার চাকরি করলেন, ইতিমধ্যে আমেরিকার ভাগ্যকাশে নেমে এল এক বির্পযয়। দাসপ্রথা বিরোধের প্রশ্নে উত্তর আর দক্ষিণের মধ্যে প্রথমে দেখা দিল বিরোধ তারপর শুরু হল গৃহযুদ্ধ।
প্রাচ্যের এক মনীষী একবার বলেছিলেন, ঈশ্বর শহরের মানুষের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যান।কিন্তু মানুষ এত অন্ধ যে তাঁকে দেখতে পায় না।
যথার্থই হুইটম্যানের মহত্ত্বতাকে উপলদ্ধি করবার মত তখন কেউ ছিল না।শিক্ষিত ধনী ব্যক্তিরা তাঁকে উপেক্ষা করেছিল,কারণ তিনি তাদের ভন্ডামি নোংরামিকে তীব্র ভাষায় কষাঘাত করেছিলেন আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষমতা ছিল না তাঁর কবিতার মর্মকে উপলদ্ধি করবার।
১৮৬৫ সালে যখন লিস্কনকে হত্যা করা হল,বেদনায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন কবি। লিস্কন তাঁর কাছে ছিলেন স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক। এই মর্মান্তিক বেদনায় তিনি চারটি মর্মস্পর্শী কবিতা রচনা করেন। এমন শোকাবহ কবিতা বিশ্বসাহিত্যে বিরল। এর মধ্যে একটি কবিতা “ O Captain my captain” যাত্রার শেষ লগ্ন সমাহত, তীরভৃমি অদূরে, কিন্ত কান্ডারীর দেহ প্রাণহীন। হোয়েন লাইল্যাকাস লাষ্ট কবিতারটির ফুটে উঠেছে মৃত্যুর বর্ণনা।
All over bouquets of roses O death! I cover you over with roses and early lilies.
১৮৭৩ সালে কবি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েলেন। এই সময়ে তিনি থাকতেন ওয়াশিংটনে তাঁর ছোট জর্জের বাড়িতে।
১৮৯২ সালে বাহাত্তর বছর বয়সে মানুষের প্রিয় কবি হারিয়ে গেলেন তাঁর প্রিয় সূর্যের দেশে।