৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো

৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো

[১৪৭৫-১৫৬৪]

পুরো নাম মাইকেলেঞ্জেলো বুয়োনারত্তি। বাবার নাম লোদাভিকো। মাইকেলেঞ্জেলোর জন্মের (১৪৭৫) পরেই তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাধ্য হয়েই তাঁর জন্যে ধাত্রী নিয়োগ করা হল। ধাত্রী একজন পাথর খোদাইকারীর স্ত্রী। নিজেও অবসরে পাথরের কাজ করতো। ছয় বছর বয়েসে মা মারা গেলেন মাইকেলেঞ্জেলোর। তিন বছর এক অস্থির টানাপোড়ন কেটে  গেল। দশ বছর বয়েসে স্কুলে ভর্তি হলেন। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে পাশ করার পর ব্যবসা করবে। কিন্তু ছেলের ইচ্ছে অন্য রকম, পাড়ার একটি ছেলে গিরলানদাইও নামে এক শিল্পীর কাছে ছবি আঁকা শেখে।

মাইকেলে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ক্রমশই সাভানারোলের প্রভাব বেড়ে চলে। লরেঞ্জ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অবস্থার মধ্যেই দুটি মূর্তির কাজে হাত দিয়েছেন এমন সময় খবর এল লরেঞ্জ মারা গিয়েছেন। লরেঞ্জের বড় ছেলে পিয়েরো তার পিতার আসনে বসলেন। তবু মিকেলের মনে হল তাঁর জীবনের আদর্শ পুরুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। এ আসন আর পূর্ণ হবার নয়। মাইকেলের মনে হল আর এখানে থাকা সম্ভব নয়, রওনা হলেন বেলেনায় কিন্তু সেখানেও অশান্তির আগুন। আবার ফ্লেরেন্সে ফিরে এলেন। নিজের কাছে সামান্য যেটুকু অর্থ ছিল তাই দিয়ে কিনলেন একটুকরো পাথর। কয়েকদিনের মধ্যেই তাই ‍দিয়ে তৈরি করলেন এক “কিউপিড” এক শিশুমূর্তি মাথার তলায় হাত দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এক বন্ধু পরামর্শ দিল পুরনো জিনিস বলে বেঁচে দাও, ভাল দাম পাবে। মাইকেলেঞ্জেলো তাতে সায় দিলেন, ব্যবসাদার বন্ধু তখন নিজেই কিনে নিলেন। রোমে গিয়ে কার্ডিনাল বিয়ারিয়োকে বিক্রি করবার সময় ধরা পড়ে গেলেন। বিরারিয়ো বুঝতে পারলেন, এটি কোন প্রাচীন শিল্পকর্ম নয়। কিন্তু তার ভাল লাগল মূর্তির কাজ। শিল্পীকে দেখার আকাঙ্ক্ষায় লোক পাঠালেন ফ্লোরেন্সে।

শেষ পর্যন্ত পোপের আদেশে সাভনারোলোকে বন্দী করা হল। অসহ্য নিপীড়ন করে ১৪৯৮ সালের ২৩শে মে সাভানারোলকে পুড়িয়ে মারা হল। শেষ হল দুঃস্বপ্নের যুগ। কিন্তু সেখানে থাকতে আর মন চাইছিল না মাইকেলেঞ্জেলোর। এমন সময় রোম থেকে কার্ডিনালের ডাক এল। আর অপেক্ষা করলেন না। যাত্রা করলেন রোমের উদ্দেশ্যে।

কার্ডিনাল বিয়ারিয়ো তাকে একটা ৭ ফুট পাথর দিয়েছেন, কিন্তু কাজ আরম্ভ করবার অনুমতি দেননি।

মাইকেলেঞ্জেলোর মনে হল আর কিছুদিন এভাবে বসে থাকলে এতদিন ধরে যা কিছু শিখেছিলেন তার সব কিছু ভুলে যাবেন। মনের আনন্দে দিনরাত কাজ করে চলেন। মাত্র তিনদিনের শেষ হল কিউপিড। ছোট্ট এক শিশু, একরাশ উজ্জল হাসি ছড়িয়ে আছে তার কচিমুখে।

কৌতুকভরে কিম্বা কট্টরপন্থীদের যোগ্য জবাব দেবার জন্যেই আঁকলেন লেভা ও হাঁস। তাঁর কোন সৃষ্টিতেই কামনার প্রকাশ নেই। এ ছবিতেই প্রথম আঁকলেন নগ্ন লেডা শুয়ে আছে আর হাসরূপী দেবতা তাকে জড়িয়ে আছে। মিলনের আনন্দে তারা বিভোর। কিন্তু ধর্মীয় গোড়ামিতে এ ছবি চিরকালের মত হারিয়ে গিয়েছে।

লেডা ও হাঁসের মত মিকেলেঞ্জেলোর আরো অনেক সৃষ্টিই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাঁর যে সৃষ্টি কালকে অতিক্রম করে বেঁচে আছে তাতেই তিনি মহত্তম শ্রেষ্ঠতম।

জীবন শুরু করেছিলেন ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে। তারপর চিত্রকর, তারপর কবি, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হলেন সেণ্ট পিটার্স গীর্জার স্থাপতি।

১৫৬৪ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি, গীর্জার কাজ শেষ হয়ে এসেছিল। অসুস্থ মাইকেলেঞ্জেলো বিছানা থেকে জানালা দিয়ে গীর্জার দিকে তাকালেন।

মাইকেলেঞ্জেলোর মনে হল শিল্পের মধ্যে দিয়ে তিনি সমস্ত জীবন ধরে যে পরিপূর্ণ মুক্তির অন্বেষণ করেছেন, এতদিনের তার পালা শেষ হয়েছে। এবার পরিপূর্ণ বিশ্রাম। পরম তৃপ্তিতে চোখ বুজলেন মাইকেলেঞ্জেলো।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *