৬২.গুলিয়েলমো মার্কোনি

গুলিয়েলমো-মার্কোনি

৬২.গুলিয়েলমো মার্কোনি

 [১৮৭৪-১৯৩৭]

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মধ্যে রয়েছে টেলিফোন,গ্রামোফোন,রেডিও,চলচ্চিত্র টেলিভিশন,মোটরগাড়ি ও এরোপ্লেন। এইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে রেডিও । পৃথিবিীর যে কোন প্রান্ত থেকে একটা লোকের কন্ঠস্বর সারা পৃথিবীর মানুষ একই সাথে শুনতে পারে।এই রেডিওর আবিষ্কারক হচ্ছেন দি মার্কিস গিনেরসো মার্কোনি।ইতালির বোলোনিয়া শহরে ১৮৭৪ সালে ২৫শে এপ্রিল মার্কোনি জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা ছিলেন ইতালির এক ধনী ব্যক্তি মা ছিলেন আয়ারল্যান্ডের।

এই রেডিও আবিষ্কারের আগে মানে মার্কোনির জন্মের আগে আকাশ পথে দূর-দূরান্তের শব্দ ও ধ্বনি প্রেরণের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কাজ হয়েছিল।১৮৬৪ সালে অঙ্ক শাস্ত্রের প্রতিভাবান বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল বলেছিলেন বিদ্যুৎ তরঙ্গের অস্তিত আছে।যার থেকে জানা যায় বেতার তরঙ্গের দ্রুতি ও বেতার তরঙ্গের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করেন। দুঃখের কথা ম্যাক্সওয়েলের এই কথা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত না হওয়ায় কেউই তার তত্ত্বেকে সম্মান করেনি বরং তাঁকে বিদ্রূপ করেছে।তবে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বেকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে এলেন বিখ্যাত জার্মান পদার্থবিদ হেনরিখ রুডলেফ হার্জ।হার্জের আবিষ্কার ১৮৮৭ ও১৮৮৯ সালের মধ্যে খুব জনপ্রিয়তা পায়, বহু বিজ্ঞানী বেতর তরঙ্গের উপর গবেষণা করতে লাগলেন। এদের মধ্যে আছেন ইংল্যান্ডের আলিভার নাজ, রাশিয়ার আলেকজান্ডার,পোপাভ,ভারতের জগদীশচন্দ্র বোস,সত্যেন বোস আরও অনেক বিজ্ঞানী,ইতালির অগাস্টো রিঘি তখন বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক,রিঘির ছাত্র ছিলেন তরুণ যুবক মার্কোনী।হর্জের আবিষ্কারের সময় মার্কোনির বয়স ছিল পনের বছর।মার্কোনি তাঁর গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে ব্যাপাটা বুঝে নেন।সেই তখন থেকেই তিনি এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করতে থাকেন।তিনি ছিলেন ধনী ঘরের ছেলে।তাই বাড়িতে বসেই শিক্ষদের কাছ থেকে পড়তেন।১৮৯৫ সালে নিজের বাড়িতে বসে পরীক্ষা চালান।পুরানো সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করেন।প্রথমে তিনি বেতার সংকেতের কার্যকরী পদ্ধতি তৈরি করেন। এর সাহায্যে তিনি এক মাইল দূরে বেতারবার্তা পাঠাতে পারেন।

১৮৯৬ সালে তিনি দুই মাইল দূরত্বে বেতারবার্তা পাঠাতে পারেন,মার্কোনি তাঁর এই আবিষ্কারের কথা ইতালি সরকারকে জানালেন ।কিন্তু ইতালি সরকার তাঁকে অবজ্ঞা করে উড়িয়ে দিলেন,সে বছরই তিনি ইংল্যান্ডে আসেন তাঁর যন্ত্রের পেটেন্ট করতে। এখানে এসেডাকঘরের প্রধান ইজ্ঞিনিয়ারের সাথে তাঁর পরিচয় হয়।তিনি তাঁদের দেখালেন দশ মাইল পর্যন্ত বেতার বার্তা পাঠানো যায়।

যার ফলে ইতালির সরকার মার্কোনির মূল্যটা বুঝতে পারল।তাই সঙ্গে সঙ্গে মার্কোনিকে আমন্ত্রণ জনালেন ও এত বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দিলেন।এখানে বার মাইল দূরে যুদ্ধ জাহাজে বেতারবার্তা পাঠানো যায়।দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে এর সাথে বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারলেন এর শুরুত্ব ও ভবিষ্যতের সম্ভাধনার কথা ।

১৮৯৭ সালে মার্কোনি তাঁর আবিষ্কার ইতালির সম্রাট হামবার্ট ও রানী মারগেরিটারে সামনে প্রদর্শন করেন।সেই সময় তিনি জায়গায় বেতার স্টেশন তৈরি হয়।১৮৯৯ সালে মার্কোনির আবিষ্কারের সম্পর্কে সাধারণ মানুষও সজাগ হয়ে উঠেন। কারণ সে বছরই একটি স্টিমারে সাথে সংঘর্ষে আরোর সংকেতদতা ইষ্ট গুডডইন জাহাজ ডুবে যাচ্ছিল,ঠিক সেই সময় বেতারবার্তা পাঠানো হল লাইটহাউসে,সাথে সাথে নৌকা পাঠিয়ে নাবিকদের জীবন বাঁচানো হল। এরপর ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপারে বেতারবার্তা পাঠানোর কাজে লেগে যান।১৯০১ সালে ১২ ডিসেম্বর তিনি সফল হন।

১৯০৫ সালে বেতার যন্ত্রের আরও উন্নতি ঘটে। বেতার গ্রাহক যন্ত্রের সমস্ত অসুবিধাগুলো দূর হয়ে যায়।১৯১১ সালে থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে বেতারবার্তা পাঠানো পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়।যার ফলে তখনই রেডিও তৈরি হয়। ১৮৯৫ সাল থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে মার্কোনি প্রচুর পুরুষ্কার ও সম্মান পান ।১৯০১ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান।তাঁকে “দি মার্কিন-এ ভূষিত করা হয়”।১৯৩৭ সালে তার মৃত্যু হয়।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *