৪৮.চার্লস ডিকেন্স

Charles-dickens

৪৮. চার্লস ডিকেন্স
[১৮১২১৮৭০]

ইংল্যান্ডের  এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিসেন্সের জীবন তাঁর উপন্যাসের কাহিনীর মতই বড় বিচিত্র ।১৮২২ সালের ৭ই ফ্রেবুয়ারি পোর্টস মাইথ শহরে তাঁর জন্ম । আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় । বার জন ডিকেল নৌ বিভাগের সামাণ্য কেরাণি ছিলেন ।ডিকেন্সের যখন চার বছর বয়েস তাঁর বাবা এলেন চ্যাথামে। এখানেই তাঁর শৈশবের আনন্দ ভরা দিনগুলি কেটেছিল।

ডিকেন্সের মা ছিলেন শিক্ষিত পরিবারের সন্তান।নিজেও প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ করেছিলেন ।ডিকেন্সের শিক্ষা প্রথম পাঠ শুরু হয় তাঁর মায়ের কাছে । কিছুদিন পর স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হলেন ।

ছেলেবেলা থেকেই ডিকেন্স দেখতেন দোতালায় বাবার ঘরে বিরাট একটা আলমারী ভর্তি সারি সারি বই । বইগুলো তাকে আকর্ষণ করতে কিন্তু তাতে হাত দেওয়া নিষেধ ছিল।

ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা তাকে ইচ্ছামত আলমারি থেকে বই নিয়ে পড়ার অনুমতি দিলেন।ডিকেন্সের সামনে যেন এক নতুন জগতের দ্বার খুলে গেল। মাত্র নয় বছরের মধ্যেই ইংরেজী সাহিত্যের অধিকাংশ দিকপাল লেখকের লেখা বই পড়ে শেষ করে ফেললেন।

 

কিন্তু ডিকেন্সের বাবা আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছিল।বিরাট সংসারের ব্যয় মেটাতে প্রতি মাসেই ধার করতে হত। ধার শোধ হত না, শুধু সুদ বেড়েই চলছিল। নিরুপায় হয়ে ক্যামডেনের এক বস্তি বাড়িতে গিয়ে উঠলেন । ডিকেন্সের স্কুল বন্ধ হয়ে গেল।

পাওনাদাররা কোর্টে নালিশ জানাল । দেনার দায়ে ডিকেন্সের বাবা জেলে যেতে হল।কোর্টে আদেশে তাদের বাড়ির প্রায় সব কিছুই নিয়ে যাওয়া হল, তার মধ্যে ডিকেন্সের প্রিয় বইগুলাও ছিল।১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হল  হার্ড টাইমস।একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই উপন্যাস লেখা হয়েছিল।নতুন উৎপাদন ব্যবস্থায় তৎকালিন বুর্জোয়া শ্রেনীর প্রগতিশীল মতবাদের বাস্তব ফল।একদিকে যখন অবিশ্রান্ত লিখে চলছিলেন, তখন হাউস,হোল্ড ওয়ার্ডস নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনার ভার পড়ল (১৮৫০) তাঁর উপর।প্রচন্ড কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করলেন ।কিছুদিন পর “ অল দি  ইয়ার রাউন্ড” (All the Year Round) নামে আর একটি পত্রিকার সগল।

বিবাহ বিচ্ছেদের পরবর্তীকালে ডিকেন্স যে সব উপন্যাস রচনা করলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-এ টেল অফ সিটিস ।(A tale of two cities) এ গ্রেট এক্সপেকটেশন (Great Expectations)। A tale of two cities ফরাসি বিপ্লবের উপর লেখা রোমান্টিক উপন্যাস। দুটি শহর লন্ডন ও প্য্যরিস ফরাসী বিপ্লবের সময়ে এই দুটি শহরের মানুষের জীবনকথা জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই উপন্যাসে।

১৮৬০ সালে প্রকাশিত হল Great Expectations। এখানে নায়ক তাঁর কাহিনী নিজেই বর্ণনা করেছেন। এ কাহিনীর নায়ক পিপ গ্রামের দরিদ্র বালক। সে স্বপ্ন দেখে একদিন সে বড় হবে । তার আশা-আকাঙ্খার বিচিত্র কাহিনী ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসের মধ্যে।

ডিকেন্সের শেষ উল্লেখযোগ্য উপন্যাস আওয়ার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড (our mutual friend)। এই পর্যায়ে ডিকেন্সের প্রতিভা অনেক অংশে স্তিমিত হয়ে এসেছিল।

গত কয়েক বছর ধরে ইংল্যান্ড আমেরিকার  বিভিন্ন প্রান্তে একক পাঠ করতে করতে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল।গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন । সামান্য সুস্থ হতেই নতুন উপন্যাস শুরু করলেন “Edwin drood”। রহস্য কাহিনী ,কিন্তু এই কাহিনী শেষ করে যেতে পারেননি ডিকেন্স।

১৮৭০ সালের ৪ঠা জুন বিশেষ অনুরোধে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে উপন্যাসের একটি অংশ পড়তে পড়তে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে যান।

পাঁচ দিন পর ৯ই জুন তাঁর মৃত্যু হল। তখন তাঁর বয়েসে মাত্র আটান্ন তার দেহ ওয়েস্ট মিনিস্টার এ্যাবিতে কবিদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে সমাদিত করা হল।

মৃত্যুর সময়ে তিনি বারোটি সম্পূর্ণ ,একটি অসমাপ্ত উপন্যাস, ছোটদের জন্যে ইংল্যান্ডের ইতিহাস ,বাইবেলের গল্প,বেশ কিছু ছোট গল্প,কৌতূক নক্সা ও কয়েকটি নাটক রেখে যান।

ডিকেন্স তাঁর জীবনব্যাপী সাহিত্য সাধনার মধ্যে দিয়ে সমগ্র ভিক্টোরিয়া যুগকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন। শুধুমাত্র সৃষ্টি আনন্দের জন্য তিনি কলম ধরেননি। তিনি দেখেছিলেন সমাজের সব অবক্ষয় কদর্যতা অভিজাত সমাজের ক্ষয়ে আসা কুৎসিত জীবন,শিল্প বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে উদ্ভুত গ্লানি-সব কিছুর বিরুদ্ধে তাঁর লেখনি নির্মম হয়ে উঠেছিল।

তিনি বিপ্লবী না হলেও সমাজে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন। সামাজিক ,রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কারের ঢেউ উঠেছিল ।

এই ঢেউতে দূর হয়ে গিয়েছিল অনেক পাপ অন্যায়, অবিচার,অত্যাচার।সম্ভবত সেই কারণেই বার্ণাড শ যথার্থৎ বলেছিলেন “Of all English writers… only Charles Dickens who did much to cure the evils of his time”

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *