স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কলার উপকারিতা জেনে নিন.!

কলা

কলার পরিচিতি…

বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় একটি ফল কলা। মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি খেতে বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। কলা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। কলা শুধু খেতে নয় এটা একটি প্রাকৃতিক ঔষধও বটে।আবার অনেকেই আছেন যারা কলা খেতে পছন্দ করেন না  শুধু মাত্র তাদেরকেই জানিয়ে রাখছি কলা অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। কলা শুধু খেতে সুস্বাদু নয় এটি আমাদের শরীরের শক্তি বর্ধনকারী সুকরোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং ফাইবার এর অভাব পূরণ করে থাকে।

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গেছে মাত্র দুইটি কলা খেলে প্রায় ৯০ মিনিট পূর্নোদ্যমে কাজ করার মত শক্তি আমরা পেয়ে থাকি। শুধু তাই নয় বিশ্বে ক্রীড়াবিদদের ডায়েটের অন্যতম ফল হল কলা। আপনি নিশ্চিন্তে কলা খেতে পারেন কারন কলাতে কোন ফ্যাট বা চর্বি নেই বললেই চলে। কলা যে শুধুমাত্র আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় তা নয় বরং মানসিক,শারীরিক সহ আরও অনেক অসুস্থতা থেকে কলা আমাদের প্রতিরোধ করে।

কলার পুষ্টিগুণ…

আচ্ছা, আপনি কি কলা খেতে ভালবাসেন? যদি বাসেন তবে এই লেখাটি পড়ার পর কলার প্রতি আপনার ভালবাসা বাড়বে বই কমবে না। আর যদি না পছন্দ করে থাকেন, তবে ভালবাসতে শুরু করবেন কিনা বলতে পারছি না, তবে এইটুকু বলতে পারি, কলার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে বাধ্য হবে। আপনাকে মুহূর্তের মধ্যে এনার্জি দিতে কলার জুরি মেলা ভার।তাই দেরী না করে আসুন জেনে নিন কলার পুষ্টিগুণ।

প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় আছে ১১৬ ক্যালোরি, ক্যালসিয়াম ৮৫মি.গ্রা., আয়রন ০.৬মি.গ্রা. , প্রোটিন ১.২%, ফ্যাট/চর্বি ০.৩%, খনিজ লবণ ০.৮%, আঁশ ০.৪%,শর্করা ৭.২%,  অল্প ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৮মি.গ্রা., ফসফরাস ৫০মি.গ্রা.,পানি ৭০.১%

আপনাকে একটা তথ্য দিয়ে রাখি অবসাদে বা অবসর সময়ে ভোগা কিছু মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে কলা খেলে ভাল বা সুস্তটা বোধ করেন তারা। কলার উপাদানের মধ্যে থাকে ট্রিপটোফ্যান প্রোটিন যা মানুষের শরীরে পরিণত করে সিরোটোনিন হরমোনে। সিরোটোনিন হরমোন যা অফ হ্যাপিনেস নামেও পরিচিত। আমাদের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা বাড়লে মুড বা মেজাজ ভাল হয়ে রিল্যাক্স বোধ করি আমরা। আবার মুড অফ হল একটি অতি পরিচিত প্রি-মেন্সট্রয়াল সিনড্রোম। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি৬ আমাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রেখে মুড ঠিক রাখতে সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কলার কার্যকারিতা…

১. মাংসের তরকারী আরও ‍সুস্বাদু করে তোলে…

আমাদের দেশে কোনো কোনো এলাকায় মাংসকে নরম ও সুস্বাদু করে তুলতে রান্নার সময় কলাপাতা দিয়ে পেঁচিয়ে রান্না করা হয়। এই একই ফলাফল যদি আপনি তরকারীতে কলা ব্যাবহার করেন তাহলে পেতে পারেন। আপনি বাজার থেকে কলা কিনে এনেছেন কিন্তু এখনও তা কাঁচাই আছে? চিন্তা কিসের? যদি পারেন মাংসের তরকারিতে কলা দিয়ে রেধে ফেলুন। এতে করে দেখা যায় বাড়িতে পড়ে থাকা কাঁচা কলাগুলো যেমন নষ্ট না হয়ে কাজে লাগছে তেমনি আপনার তরকারিতে ভিটামিন ও ফাইবার এর পরিমানও অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

২. আপনার চুলকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে কলা ব্যবহার করুন…

আমরা আমাদের সুন্দর চুলের জন্য কত কিছুই না করে থাকি। এখন আপনার চুলের পরিচর্যায় কসমেটিকস এর পরিবর্তে কলা অন্যতম বিকল্প বাবস্থা হতে পারে। আপনি যদি চান হেয়ার মাস্ক হিসেবে চুলে ব্যাবহার করতে পারেন কলা। কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও ফলিক অ্যাসিড সহ আরও অনেক পুষ্টিগুন। তাই এটি আপনার চুলে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। আপনি কলার সাথে চুলের সৌন্দর্যবর্ধক অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত করুন এতে করে আপনি আরও ভালো ফলাফল পেতে পারেন। প্রাকৃতিক উপাদান এর জন্য আপনার প্রয়োজন কলা, দুধ এবং মধু। প্রথমে কলা, দুধ এবং মধু  একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর মিশ্রিত উপাদানটি চুলে দিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনি চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুলের সৌন্দর্য আগের থেকে অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

৩. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কলা…

আপনার ত্বকে কলা ব্যবহার করে খুব সহজেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এতে আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না শুধু কলা থেঁতলে নিয়ে মুখে লাগান। এরপর ১৫-২০ মিনিট এভাবে রেখে অপেক্ষা করুন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কেননা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ যা মুখের বিশেষ করে কাল দাগ দুর করে। আরও একটা বিশেষ উপাদান ভিটামিন-ই যা আপনার ত্বকে আনবে তারুন্যের ঝলক।আপনাকে একটা ভাল পরামর্শ দেয়, বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যে বা অনুষ্ঠানের আগের রাতে মুখের দাগ দুর করতে চাইলে পুরো মুখে কলা ব্যাবহার করুন এতে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।

৪. কলা দেহে প্রোবায়টিক এর যোগান দেয়…

আমাদের দেহের অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রোবায়টিক গ্রহন করা একান্ত প্রয়োজন। আর আমাদের অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি হওয়া মানেই পুরো শরীরে এর প্রভাব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া। প্রোবায়টিক এর একটি অন্যতম উৎস হলো কলা। তাই আমরা ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পেতে কলা খেতে পারি। কেননা কলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্রুক্টোওলিগোস্যাকারাইড (FOS) যা দেহে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৫. দুশ্চিন্তা দুর করতে কলা খেতে পারেন…

আমরা হইত অনেকেই জানিনা যে কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এছাড়াও কলা আমাদের মানসিক চাপ কমায় এবং একই সাথে মানসিক কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি করে থাকে। এর কারন হলো কলা আমাদের দেহে কর্টিজল নামক স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রন করে। তাই আপনি যেকোনো গুরুত্বপুর্ন বা স্ট্রেসফুল কাজ শুরু করার পুর্বে একটি কলা খেয়ে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৬. দেহে ওজন কমাতে সাহায্য করে…

আমরা ওজন কমাতে কত কিছুই না করে থাকি। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত কলা খেতে পারি তাহলে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করবে। অধিক ক্যাররির খাবারের বিকল্প খাবার হিসেবে কলা খাওয়া হলে তা শরীরে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মিষ্টি জাতীয় খাবার হওয়ায় চিনির আকাঙ্খা থেকে আপনাকে সহজেই মুক্তি দেবে। আপনি জানেন কি মাঝারি আকৃতির একটি কলায় মাত্র ১০৫ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও রয়েছে ক্রোমিয়াম নামক খনিজ পদার্থ, যা বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে।

৭. শারিরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামে শক্তি যোগায়…

আমাদের শরীরে বড় ধরনের শারিরিক পরিশ্রম এর জন্য প্রয়োজন ভিটামিন-সি। কেননা ভিটামিন-সি শরীরের পেশি, লিগামেন্ট ও রগ শক্তিশালী করে তোলে। আর কলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যেহেতু কলা শারিরিক পরিশ্রমে প্রচুর সহায়তা করে, তাই ব্যায়াম করার পূর্বে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটা হবে আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

৮. ঘুমের জন্য সহায়ক হবে কলা…

রাতে ঠিকমত ঘুম আসে না, শুধু বিছানায় এপাশ ওপাশ করেন? কলা হলো এই সমস্যার অন্যতম একটা প্রাকৃতিক সমাধান। কলা হল ট্রিপটোফেন নামক এক প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড এর খুবই ভালো উৎস। এই ট্রিপটোফেন আমাদের শরীরে সেরোটিন নামক হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে থাকে। এই হরমোন আমাদের মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে, এমনকি মেজাজ খারাপ থাকলে তা-ও ভালো করে দিতে পারে।আপনি যদি পারেন ঘুমানোর প্রায় এক ঘন্টা আগে একটি কলা খেয়ে নিন যাতে আপনার শরীর তা হজম করতে পারে এবং ট্রিপটোফেন তৈরি করতে পারে আর আপনাকে উপহার দিতে পারে রাতে একটি শান্তিময় ঘুম।

৯. কলা আপনার মাইগ্রেন দুর করবে…

আমরা মাইগ্রেসনের সমস্যাই ভুগি না এমন মানুষ হয়ত পাওয়া খুব কষ্টকর। এই মাথাব্যাথা ও মাইগ্রেন এর ভয়ানক ব্যাথা আপনার সারাটা দিন মাটি করে দিতে পারে। কিন্তু মজার কথা হল কলা-ই পারে এই অবস্থা প্রতিরোধ করতে। কেননা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম যা  মাথাব্যাথার প্রকৃতিক নিরাময় হিসেবে দারুণ কাজ করে। তাই এখন থেকে একটা কাজ করুন যে কোনো সময় আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হতে চাইলেই দেরি না করে একটি কলা খেয়ে ফেলুন। আপনি হয়ত মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *